
প্রমীলা নজরুল: নজরুলের প্রেরণাদায়িনী “দুলী”র প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি
বাংলা সাহিত্যের মহান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনে যে নারীটি শুধু ভালোবাসার প্রতীকই নন, ছিলেন অনুপ্রেরণার উৎস, তিনি প্রমীলা নজরুল। জন্মেছিলেন এক সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের ধারায়, লালিত হয়েছিলেন সংগ্রাম ও সাহসিকতায়—সেই নারীটির প্রকৃত নাম ছিল আশালতা সেনগুপ্তা, ডাকনাম দোলনা, স্নেহনাম ‘দুলী’। আর প্রমীলা নামটি ছিল নজরুলের দেয়া ভালোবাসামাখা এক উপহার।
১৩১৫ সালের ২৭ বৈশাখ (১০ মে ১৯০৮), মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে আশালতার জন্ম। পিতা বসন্ত কুমার সেনগুপ্ত এবং মাতা গিরিবালা সেনগুপ্তার এই কন্যা ছোট থেকেই ছিলেন প্রগলভ, চঞ্চল এবং বর্ণিল এক চরিত্রের অধিকারী। কৈশোরে তার গাত্রবর্ণ ছিল চাঁপাকলির মতো — আর সে স্মৃতিই হয়তো কবিকে উদ্বেলিত করেছিল ‘দোলনচাঁপা’ নামক কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করতে।
পিতার অকাল মৃত্যু পরিবারে নেমে আনে দারিদ্র্যের ছায়া। এরপর মায়ের সঙ্গে কুমিল্লায় কাকার বাড়িতে চলে যান ছোট্ট দুলী। এখানেই কবি নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাৎ। কুমিল্লার কান্দির পাড়ে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে এক সন্ধ্যায় নজরুলের চোখে ধরা দেন কিশোরী প্রমীলা—যে সাক্ষাৎ বদলে দেয় দুজনের জীবনই।
১৯২১ সালে কুমিল্লায় নজরুলের আগমন, আলী আকবর খানের আহ্বানে; কিন্তু ভাগ্যচক্রে সেটা হয়ে ওঠে ভালোবাসার সূচনা। এরপর সময়ের প্রবাহে প্রমীলা হয়ে ওঠেন বিদ্রোহী কবির প্রেরণাদায়িনী সঙ্গিনী। সাহিত্যের পথে চলতে গিয়ে নজরুলের অনেক কবিতা, গান ও গদ্যে অনুপ্রেরণা হয়ে থেকেছেন প্রমীলা।
তবে এই প্রেম ও দাম্পত্যজীবনের পরিণতি সুখের ছিল না। দুঃখ-কষ্ট আর সংগ্রামের ছায়া সঙ্গী ছিল আজীবন। কবির অসুস্থতা, নিঃসঙ্গতা আর নিঃস্বতা সবই ভাগ করে নিয়েছিলেন প্রমীলা। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত নজরুলের পাশে থেকে এক অকৃত্রিম ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।
১৯৬২ সালের ৩০ জুন, কলকাতার বাড়িতে চিরবিদায় নেন প্রমীলা নজরুল। রেখে যান না বলা বহু গল্প, বিস্মৃত অতীত আর এক মহান কবির জীবনে জ্বলজ্বলে এক ভালোবাসার ইতিহাস।
প্রমীলা নজরুলের জন্মদিনে, তাঁর প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আদরের দুলী, তুমি চিরস্মরণীয়।