মাহাবুব কাউসার, সমাজকর্মী
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতা বাড়ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থানে ঘটছে দুর্ঘটনা, হারাচ্ছে নিরীহ প্রাণ। সড়ক দুর্ঘটনা এখন এক ভয়ংকর সামাজিক সমস্যা, যা পরিবার, সমাজ ও অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ:
১. বেপরোয়া গতি ও ওভারটেকিং: চালকরা প্রতিযোগিতার মানসিকতা নিয়ে গাড়ি চালান, ফলে সামান্য ভুলেই ঘটে দুর্ঘটনা।
২. চালকের অদক্ষতা ও ক্লান্তি: প্রশিক্ষণহীন চালক, রাতভর ড্রাইভিং বা মাদকাসক্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বিপদের অন্যতম কারণ।
৩. ট্রাফিক আইন অমান্য: সিটবেল্ট ব্যবহার না করা, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো, সিগন্যাল ভঙ্গ করা ইত্যাদি আইন অমান্য করাও বড় ঝুঁকি।
৪. সড়কের ত্রুটি ও অব্যবস্থাপনা: গর্তযুক্ত রাস্তা, চিহ্নহীন স্পিড ব্রেকার, অপর্যাপ্ত সড়কবাতি ও সড়কের সংকীর্ণতা দুর্ঘটনা বাড়ায়।
৫. যানবাহনের ত্রুটি ও অতিরিক্ত বোঝাই: রক্ষণাবেক্ষণহীন যানবাহন এবং অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন দুর্ঘটনা ডেকে আনে।
তাছাড়া, অপরিপক্ব চালক (অনুর্ধ্ব-১৮ বছর) ও প্রশাসনিক নজরদারির অভাবের কারণেও সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে থাকে।
স্পিড ব্রেকার! আংশিক সমাধান-
দুর্ঘটনা রোধে অনেক স্থানে স্পিড ব্রেকার স্থাপন করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, এটি কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান নয়। চিহ্নহীন বা ভুল নকশায় তৈরি স্পিড ব্রেকার অনেক সময় নতুন দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে রাতের বেলায় এগুলো চালকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। হঠাৎ ব্রেক কষে নিয়ন্ত্রণ হারানো, যাত্রী আহত হওয়া এবং পেছনের গাড়ির সাথে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘন ঘন ঘটছে।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কেবল স্পিড ব্রেকারের ওপর নির্ভর না করে একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
প্রস্তাবনা-
প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সিংয়ে কঠোরতা: সব চালকের জন্য বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত দক্ষতা যাচাই।
সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন: নিরাপদ নকশা, মানসম্মত রাস্তাঘাট নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
কঠোর আইন প্রয়োগ: ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা।
যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ফিটনেস টেস্ট ও অতিরিক্ত যাত্রী/পণ্য বহনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: গণমাধ্যম, সামাজিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ট্রাফিক সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া।
সড়ক দুর্ঘটনা কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়। এটি মানুষের জীবন, পরিবার ও ভবিষ্যৎ কেড়ে নিচ্ছে। তাই দুর্ঘটনা রোধে টেকসই সমাধান ছাড়া বিকল্প নেই। স্পিড ব্রেকার একটি সাময়িক উপায় হতে পারে, কিন্তু নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে হলে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং সবার সচেতনতা।