
◻️ জসিম তালুকদার, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে উপজেলা কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসবোত্তর সেবা (পোস্টন্যাটাল কেয়ার-পিএনসি) নিতে উদাসীন প্রসূতি মায়েরা।
মা ও নবজাতক মৃত্যুর অধিকাংশই হয়ে থাকে সন্তান প্রসবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। ফলে প্রসবের সময় কোনো জটিলতা দেখা দিলে মা ও শিশু দু’জনের দ্রুত প্রসব-পরবর্তী সেবা (পিএনসি) নিশ্চিত করা জরুরি।
চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভকালীন সেবা না নিলে এবং বাড়িতে প্রসব করালে অনেক সময় পরে জটিলতা দেখা দিতে পারে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরের ২৪ ঘণ্টা মা ও নবজাতকের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঁচদিনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ১৩ থেকে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৫ উপজেলার মোট ২০০ ইউনিয়নের ৫৩৮টি ক্লিনিকে এনএনসি সেবা নেয় ৯৪৫ জন এবং পিএনসি নেয় ৪৫৭ জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি বিভাগের প্রধান বলেন, ‘মা ও নবজাতক মৃত্যুর অধিকাংশই হয়ে থাকে সন্তান প্রসবের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে। ফলে প্রসবের সময় কোনো জটিলতা দেখা দিলে মা ও শিশু দু’জনের দ্রুত প্রসব-পরবর্তী সেবা (পিএনসি) নিশ্চিত করা জরুরি। পিএনসি পেলে মায়েরাও জানতে পারেন, কীভাবে নিজের ও নবজাতকের যত্ন নিতে হয়। তাই নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রসবের প্রথম দু’দিনের মধ্যে পিএনসি নেওয়ার কথা বলা হয়।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিকেলের গাইনি ওয়ার্ডে প্রসব পরবর্তী জটিলতা নিয়ে যেসব রোগী ভর্তি হয় তারা এএনসি সেবা নেননি। আবার অনেকে এএনসি সেবা নিলেও ৪২ দিনের মধ্যে পিএনসি সেবা নেয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রসূতিদের অন্তত চারটি পিএনসি নিতে বলা হয়। প্রথম ২৪ ঘণ্টায় একটি; দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিনে একটি; চতুর্থ বা পঞ্চম বা ষষ্ঠ দিনে একটি এবং ৪২ দিনে একটি। পিএনসি খুব জরুরি হলেও চট্টগ্রামে এটি খুবই উপেক্ষিত।’
এদিকে প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতার কারণে ফিস্টুলা, প্রল্যাপ্স, জরায়ুর মুখের ক্যান্সার, মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত, ইকটোপিক প্রেগন্যান্সি, ফ্রাইব্রয়েড টিউমারসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রীরোগ বিভাগ ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে শয্যা আছে ৬৪টি। কিন্তু প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৩০ জন রোগী ভর্তি হন।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরে দেখা গেছে, গত তিন মাসে যেসব অপারেশন হয়েছে, সেসব রোগীদের অনেকেই এখনও এই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এমনই এক রোগী চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার রাবেয়া খাতুন। তিনি জানান, তিনি প্রল্যাপ্সেরই অপারেশন করিয়েছেন দু’বার। তারপরও সমস্যার সমাধান হয়নি।
প্রসবের পর নিয়ম মেনে সেবা নিতে কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো থেকে প্রচারণা চালানো হয়। হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকে যারা প্রথম প্রসব-পূর্ব সেবা নিতে আসেন, তাদের প্রসব-পরবর্তী সেবার গুরুত্ব বুঝিয়ে সচেতন করা হলেও সেবার প্রতি আগ্রহী হন না প্রসূতি মায়েরা। কিন্তু পিএনসি সেবা নিতে এলে মায়ের সঙ্গে সন্তানেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়ে যায়।