২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

হাসপাতালে সেবার নামে হয়রানিমূলক বাণিজ্য: সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলের জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের নীরব আর্তনাদ

বাংলার বারুদ
প্রকাশিত মে ১০, ২০২৫, ১০:৩৩ অপরাহ্ণ
হাসপাতালে সেবার নামে হয়রানিমূলক বাণিজ্য: সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলের জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের নীরব আর্তনাদ

হাসপাতালে সেবার নামে হয়রানিমূলক বাণিজ্য: সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেলের জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের নীরব আর্তনাদ

 

ক্রাইম রিপোর্ট | সিলেট প্রতিনিধি:

“রোগী নয়, যেন গ্রাহক—সেবা নয়, যেন শোষণ।” এমনই অভিজ্ঞতা হচ্ছে সিলেটের অন্যতম বৃহৎ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেবা পাওয়ার আগেই শুরু হয় টিকিট ও বহুবিধ ফি আদায়ের হয়রানি।

 

প্রথমেই জরুরি বিভাগের গেট পেরোতেই দিতে হয় ১০ টাকা টিকিট ফি। রোগী ভর্তি হলে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ২০ টাকা। এরপর হুইলচেয়ার বা ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে পৌঁছাতে গুনতে হয় ১০০ থেকে ২০০ টাকা। একাধিক স্বজন প্রবেশ করলে প্রতিজনের জন্য ২০ টাকা করে দিতে হয়।

 

যেখানে থাকার কথা মানবতা, সেখানে শয্যার দাম নির্ধারিত ১০০ টাকা। শয্যা না পেলে রোগীকে মেঝেতে রাখা হয়। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলে ডাক্তার এসে দেন একগাদা পরীক্ষা ও ঔষধের প্রেসক্রিপশন—যার মধ্যে থাকছে ৪টি টেস্ট, এক বস্তা স্যালাইন ও নানা ধরনের ঔষধ।

 

প্রতিদিনই রোগীর জন্য ডাক্তার বদলায়, পরিবর্তন হয় চিকিৎসা পদ্ধতি ও পরীক্ষা। প্রতিটি টেস্টের সময় হুইলচেয়ার বা ট্রলির ভাড়া আগের মতোই গুণতে হয়। পাশাপাশি প্রতিদিন নতুন নতুন ঔষধ যুক্ত হয় রোগীর ব্যবস্থাপত্রে।

 

সব পরীক্ষা শেষে শুরু হয় অপারেশনের প্রস্তুতি। সেখানে রোগীর আত্মীয়কে কিনে দিতে হয় ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার ঔষধ—যা অফেরতযোগ্য। অপারেশন সফল হলে থিয়েটারের কর্মচারী থেকে দারোয়ান পর্যন্ত সবাইকে ‘খুশি’ করতে হয়। আর ব্যর্থ হলে রোগীর স্বজন হয়ে পড়ে নিঃস্ব।

 

রোগী সুস্থ হলে শুরু হয় আরেক দফা হয়রানি। ছাড়পত্র পেতে নার্স, ওয়ার্ডবয়, দারোয়ান—সবাইকে ‘খুশি’ না করলে মিলছে না ছাড়পত্র। এসব হয়রানির একপর্যায়ে হাসপাতালের গেট বন্ধ রেখে শুধুমাত্র ইমারজেন্সি গেট দিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য করা হয় রোগীর স্বজনদের—যেখানে থাকে ‘গেট পার্স’ নামে অর্থ আদায়ের আরেক ফাঁদ।

 

স্থানীয়রা বলছেন, “এই গেট বন্ধ রাখার মূল উদ্দেশ্য দারোয়ানদের দৈনিক উপার্জন নিশ্চিত করা।”

 

প্রশ্ন উঠেছে—এ কেমন চিকিৎসাসেবা? এ কেমন জনসেবা প্রতিষ্ঠান? একদিকে গেইটে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ব্যানার টাঙানো, আর ভিতরে চলছে যেন নির্যাতনের লীলাভূমি।

 

জনসচেতন নাগরিকরা দাবি করেছেন—এই ‘গেট পার্স’ ও অবৈধ অর্থ আদায়ের বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। রোগীর নামে চলা হয়রানিমূলক বাণিজ্যের অবসান হওয়া এখন সময়ের দাবি।