১লা ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে খুন করতে দেড় লাখে ‘কিলার’ ভাড়া করেন স্বামী-শাশুড়ি

বাংলা বারুদ
প্রকাশিত আগস্ট ২৬, ২০২৫, ১০:০৩ অপরাহ্ণ
অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূকে খুন করতে দেড় লাখে ‘কিলার’ ভাড়া করেন স্বামী-শাশুড়ি

Manual2 Ad Code

নিজস্ব প্রতিনিধি: তমাল চন্দ্র দে রুদ্র।

আগে দুইবার বিয়ে করেন আব্দুল গোফরান। কিন্তু সেই বউয়ের সঙ্গে মনের মিল ছিল না মা নাজনীন বেগমের। এজন্য দুইজনকেই ডিভোর্স দেন ছেলে। এরপর তৃতীয় পুত্রবধূ হিসেবে আপন বোনের মেয়েকে ঘরে তোলেন। কিন্তু তার সঙ্গেও মনোমালিন্য চলতে থাকেন মায়ের।

Manual1 Ad Code

এবার আর ডিভোর্সের ‘ঝামেলায়’ না গিয়ে একেবারে দুনিয়া থেকেই সরানোর পরিকল্পনা নেন মা-ছেলে।

সে অনুযায়ী দেড় লাখ টাকায় ভাড়া করেন পেশাদার এক খুনিকে। সেই অনুযায়ী খুনি ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা ওই গৃহবধূকে খুন করার পর ডাকাতির নাটক সাজান শাশুড়ি।

চার বছর পর মা-ছেলের ফিল্মি স্টাইলে পুত্রবধূ খুনের গল্প উঠে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে। মো. আরিফ (৩৫) নামের সেই পেশাদার কিলারকে গ্রেপ্তার করার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। সোমবার (২৫ আগস্ট) চট্টগ্রামের আদালতে জবানবন্দি দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি। এর আগে রোববার তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

Manual6 Ad Code

মামলার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে গোফরানের সঙ্গে তার আপন খালাতো বোন মাহবুবা আক্তারের (২৪) বিয়ে হয়। মাহবুবার বাবার বাড়িও কাছাকাছি নগরীর সল্টগোলা ক্রসিং এলাকায়। বিয়ের পর থেকেই শাশুড়ি ও স্বামী মিলে তাকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করে আসছিল।

২০২১ সালের ১৬ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে গোফরানের বোন শান্তা মাহবুবার ছোট বোন সাদিয়াকে ফোন করে জানান, অজ্ঞাত লোকজন তার ভাবীকে শ্বাসরোধ করে অজ্ঞান করে রেখে গেছে। এ খবর পেয়ে ভাই মিশকাত সেখানে গিয়ে মাহবুবাকে মৃত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন।

তার গলায়, মুখে এবং শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তখন নাজনীন তাকে জানান, তাদের বাসায় ডাকাতি হয়েছে এবং ডাকাতরা মাহবুবাকে খুন করেছে।

Manual2 Ad Code

এ ঘটনায় গৃহবধূর ভাই মো. মিশকাত গৃহবধূর স্বামী আব্দুল গোফরান (৩৫) ও তার মা নাজনীন বেগমকে (৫৫) আসামি করে মামলা করেন। মামলা করার পর পুলিশ নাজনীন ও তার ছেলে গোফরানকে গ্রেপ্তার করে।

তাদের কাছ থেকে আরিফের সম্পৃক্ততার তথ্য পেলেও তাকে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হয় ইপিজেড থানা পুলিশ। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর এ তিনজনকে আসামি করে পুলিশ অভিযোগপত্র দেয় আদালতে। কিন্তু আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে পিবিআইকে অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মহসীন চৌধুরী জানান, আরিফের অবস্থান শনাক্তের পর রোববার (২৪ আগস্ট) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন আরিফ জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি ২০২১ সালে ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন, থাকতেন ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে। তখন থেকেই ওই পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। একদিন নাজনীন আরিফের কাছে তার পুত্রবধূকে খুন করতে পারবে কী না, জানতে চান। আরিফ দেড় লাখ টাকার চুক্তিতে রাজি হন।

তিনি জানান, চুক্তি অনুযায়ী আরিফ তার বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে তিনজন প্রফেশনাল কিলার ভাড়া করে আনেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন শুক্রবার দুপুরে নামাজরত অবস্থায় মাহবুবাকে শারীরিক আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। নাজনীন বেগম কথামতো আরিফকে দেড় লাখ টাকা দেন। সেগুলো আরিফসহ চারজন মিলে ভাগ করে নেন। এরপর আরিফসহ চারজন কক্সবাজারে চলে যান। বছরখানেক আগে আরিফ আবার চট্টগ্রাম শহরে এসে আতুরার ডিপোতে হকারের পেশায় যুক্ত হন।

এ ঘটনায় জড়িত অপর তিনজনকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। এসআই মহসীন জানান, নাজনীন বেগম প্রচণ্ড বদরাগী মহিলা। এর আগেও দুই বউকে তিনি ডিভোর্স দিতে বাধ্য করান ছেলেকে। তৃতীয়জন যেহেতু আপন বোনের মেয়ে, সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় ডিভোর্স সম্ভব নয়, তাই খুনের সিদ্ধান্ত নেন। খুনের সময় তিনি ও তার ছেলে সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই গৃহবধূ তখন ছিলেন ছয় মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা।

Manual5 Ad Code