২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৩শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

বাঁশখালীতে নীরব এলাকাতে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ

বাংলার বারুদ
প্রকাশিত মে ১৭, ২০২৫, ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ
বাঁশখালীতে নীরব এলাকাতে মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ

◻️ জসিম তালুকদার :

শব্দদূষণ মূলত একটি আপেক্ষিক বিষয়। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ‘নীরব’ এলাকায়ও মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁশখালী উপজেলার আঞ্চলিক প্রধান সড়কের দুই পার্শে অবস্থিত প্রায় ১৫ স্পটে রয়েছে প্রাইমারি স্কুল- কেজি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির,আদালত ভবন সহ উপজেলা প্রশাসন ভবন। বাঁশখালীর পুকুরিয়া ইউনিয়ন থেকে দক্ষিণে প্রেম বাজার পর্ষন্ত স্পটেও শব্দদূষণ কানে কম শোনা, বধিরসহ বাড়ছে নানান রোগ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তরুণ ও শিশু প্রজন্ম ও নির্মাণ-পরিবহন শ্রমিকরা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, মানুষের শব্দ গ্রহণের সহনীয় মাত্রা ৪০ থেকে ৫০ ডেসিবেল। অথচ বাঁশখালীর গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে শব্দের মাত্রা ৬৯ থেকে ৮২ ডেসিবেল। পরিবেশ দপ্তরের নিয়মিত পরীক্ষণে এলাকার ১০/১৫ স্পটের শব্দের মানমাত্রা পরীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রত্যেকটি স্পটেই শব্দের মান পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত।

বাঁশখালী উপজেলা সদর এলাকা ঘোষিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রধান ফটক এবং উপজেলা প্রশাসন ভবন, আদালত ভবন গেইটের গার্সল স্কুলের সামনেও অতিরিক্ত মাত্রায় শব্দদূষণ পাওয়া গেছে।

শব্দ স্তরের গ্রহণযোগ্য পরিমাণ প্রায় ৬০-৬৫ ডেসিবেল, যা একটি সাধারণ কথোপকথনের সমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দের মাত্রা কারও কারও শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে। গাড়ির হর্ন, নির্মাণ কাজ, মাইকের ব্যবহার, শিল্প কারখানা কোনো ক্ষেত্রেই শব্দ দূষণ বিষয়ে যেসব নিয়ম আছে তা মানা হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রামের জীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে শব্দদূষণ। নির্মাণকাজ, দ্রুত অপরিকল্পিত নগরায়ন, যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নানা কারণে এ সমস্যা ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে শিশু, তরুণ প্রজন্ম, শ্রমিক, ব্যবসায়িক, পরিবহনের সদস্যরা শব্দদূষণে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শব্দদূষণকে এখন আরেক নীরব ঘাতক হিসেবে উল্লেখ করছেন চিকিৎসকরাও। বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে বেশি মাত্রায় শব্দ শুনলে মানুষের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা ওষুধের মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব হয় না। এতে এক সময় বধির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর চেয়ে গ্রামের সড়কেও শব্দদূষণ হয়। এখন চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, শব্দদূষণ বাড়ছে। গাড়ির অনির্ধারিত হাইড্রোলিক হর্ন ও সাউন্ড সিস্টেমের কারণে শব্দের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ শ্রবণশক্তি হারাচ্ছেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের পরিচালক দৈনিক আজকের বাংলা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি জসিম তালুকদার কে বলেন, আমরা নগরীর শব্দদূষণ কমানোর জন্য পেশাদার যানবাহন চালকদের সচেতন করি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে সতেচনতা মূলক কার্যক্রম করি। যাতে শব্দের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যায়।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের পরিচালক আরো বলেন, ‘আমরা প্রতি মাসেই নিয়মিতভাবে নগরী ও আঞ্চলিক সদরের বিভিন্ন স্পটের শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করি। যেসব এলাকায় মানমাত্রার চেয়ে বেশি শব্দের তীব্রতা পাওয়া যায় সেগুলোর বিষয়ে প্রতিবেদন দেই। শব্দদূষণ রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পৌরসভা এবং নগর মহানগর পুলিশকে এসব বিষয়ে অবহিত করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষকে সচেতন করতে পারি। আইন প্রয়োগ করার সক্ষমতা নেই। আমরা নগরীর শব্দদূষণ কমানোর জন্য পেশাদার যানবাহন চালকদের সচেতন করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সতেচনতামূলক কার্যক্রম করি। যাতে শব্দের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা যায়।’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম গবেষণাগার কার্যালয়ের তথ্যমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, প্রশাসন এলাকা প্রভৃতি স্পটগুলোকে নীরব এলাকা ধরা হয়। এসব এলাকায় শব্দের মানমাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। কিন্তু নগরী, আঞ্চলিকে এ ধরনের ১৫ স্পটে দেড়গুণের বেশি মাত্রায় শব্দদূষণ ঘটছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমানে যেভাবে শব্দদূষণ ঘটছে তাতে প্রত্যেক অবস্থায় ক্ষতিকর। মানুষ যদি দীর্ঘদিন ধরে মাত্রাতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকে তাহলে তারা ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাবেন। কারণ শব্দের তীব্রতার কারণে মানুষের ধীরে ধীরে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা ওষুধ দিয়ে নিরাময় সম্ভব নয়। এ ধরনের শব্দদূষণ কমানো না গেলে কিংবা লোকজনকে সচেতন করা না গেলে, তাদের বড় অংশই একসময়ে কানে শুনতে পারে না।’

তবে বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুসারে, শব্দদূষণ একটি দণ্ডণীয় অপরাধ। প্রথমবার অপরাধের জন্য অনধিক এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভদণ্ড। আর পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনদিখ ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।